শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক নিউজঃ বিগত মন্ত্রিসভার ২৫ মন্ত্রী, ৯ প্রতিমন্ত্রী ও দুই উপমন্ত্রী এবারের মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিকদের প্রভাবশালী নেতারাও রয়েছেন। এবারই প্রথম শুধু আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। রাখা হয়নি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকেও। তাঁর নেতৃত্বাধীন আগের তিন সরকারে অন্য দলগুলো থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের দুই প্রভাবশালী নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ দুই জ্যেষ্ঠ নেতা স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশ থেকে দলের সঙ্গে যুক্ত আছেন। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। মতিয়া চৌধুরী তিন মেয়াদে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময়ে কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
বাদ পড়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর ১৪ দলীয় জোট গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এবং জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এবারের মন্ত্রিসভায় এ দুই নেতার কারো ঠাঁই হয়নি। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন ১৪ দলের আরেক শরিক জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাচ্ছেন না প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মৎস্যমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান। তাঁদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সংসদ থেকেও বাদ পড়েছেন। তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেওয়া মায়াকে বছরখানেক আগে গঠিত নগরের কমিটিতেও রাখা হয়নি। আর নুরুল ইসলাম বিএসসি ও মতিউর রহমান টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মন্ত্রিসভায় থাকবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন। তাঁর আসনে ছোট ভাই এ কে আব্দুল মোমেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক (চুন্নু), বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। তাঁদের মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। মসিউর রহমান রাঙ্গা জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
মন্ত্রিসভার দুই উপমন্ত্রীও বাদ পড়েছেন। তাঁরা হলেন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আরিফ খান জয়।
এবারই প্রথমবারের মতো শুধু আওয়ামী লীগের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠন করেন তিনি। ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করেন। আর সর্বশেষ ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় মহাজোটের বেশ কয়েকজনকে স্থান দেন শেখ হাসিনা।